মহানবী (সাঃ) যেভাবে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র একটি মাস। এই মাসে রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে এবং এটি আত্মশুদ্ধির মাস হিসেবে বিবেচিত। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের আগমনের পূর্বেই বিশেষ প্রস্তুতি নিতেন, যা আমাদের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আসুন জেনে নেই, তিনি কীভাবে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন।
১. রজব ও শাবান মাস থেকে প্রস্তুতি শুরু করা
মহানবী (সাঃ) রমজানের প্রস্তুতি নিতে শাবান মাস থেকেই বেশি পরিমাণে নফল রোজা রাখতেন। হাদিসে এসেছে,
আয়িশা (রাঃ) বলেন:
"আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে শাবান মাসের চেয়ে অধিক কোনো মাসে রোজা রাখতে দেখিনি।" (বুখারি, মুসলিম)
২. দোয়া করা
নবী করিম (সাঃ) রমজানের আগে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, যাতে তিনি এ মাস পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন এবং তা যথাযথভাবে পালন করতে পারেন। সাহাবাগণ রজব মাস থেকেই এই দোয়া করতেন—
"হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।" (মুসনাদ আহমদ)
৩. ইবাদত ও কোরআন তিলাওয়াত বৃদ্ধি করা
রমজানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে মহানবী (সাঃ) ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন, বিশেষত কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা এবং তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিতেন। তিনি সাহাবীদেরও বেশি বেশি ইবাদত করার উপদেশ দিতেন।
৪. দান-সদকা করা
রমজানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মহানবী (সাঃ) প্রচুর দান করতেন। হাদিসে এসেছে,
"রাসূল (সাঃ) সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন এবং রমজানে দানের মাত্রা আরও বৃদ্ধি করতেন।" (বুখারি, মুসলিম)
৫. আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র গঠনের উপর গুরুত্ব দেওয়া
মহানবী (সাঃ) রমজানের আগেই তার চরিত্রের উন্নতি করতেন এবং সাহাবীদেরও তা করতে উৎসাহ দিতেন। তিনি মিথ্যা, প্রতারণা, খারাপ ভাষা ও রাগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পরামর্শ দিতেন।
৬. শরীরকে রোজার জন্য প্রস্তুত করা
নবী (সাঃ) ধীরে ধীরে নফল রোজার মাধ্যমে তার শরীরকে রমজানের দীর্ঘ উপবাসের জন্য প্রস্তুত করতেন। এতে রমজানের রোজা রাখা সহজ হয়ে যেত।
৭. সাহাবীদের রমজানের গুরুত্ব বোঝানো
তিনি রমজানের আগে সাহাবীদের জ্ঞান দিতেন এবং তাদের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি বলতেন,
"তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এতে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।" (সহিহ মুসলিম)
উপসংহার
মহানবী (সাঃ) রমজানের জন্য কেবল শারীরিক নয়, বরং আত্মিক ও মানসিক প্রস্তুতিও নিতেন। আমাদেরও উচিত তার অনুসরণ করে আগেভাগেই ইবাদত, দান-সদকা এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে রমজানের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র মাসের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরো পড়ুন |
---|
রমজানে কী খাবার খাওয়া উচিত? – স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা |
গরমের দিনে যেসব ফল থাকা চাই আপনার খাদ্যতালিকায় |
প্রতিদিন একটি লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে যেসব উপকার পাবেন |