![]() |
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল |
বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনে তাদের নতুন পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
📣 রাজনীতিবিদদের স্বীকৃতি পরিবর্তন
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। পরবর্তীতে, গত ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সংশ্লিষ্ট খসড়ায় স্বাক্ষর করেন। এতে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে—
১. প্রবাসে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার ও বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা।
2. মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত ও সহযোগীরা।
3. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিকরা।
4. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।
এই খসড়া কার্যকর হলে অন্তত ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় পরিবর্তন করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
📣 পক্ষ-বিপক্ষ প্রতিক্রিয়া
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তারাই থাকবেন, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি, তাই তাদের নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আরও স্পষ্ট হবে।'
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'আইন বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পরিবর্তন করা যায় না। এটি অপ্রয়োজনীয় ও অপচয়মূলক উদ্যোগ।'
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল মনে করেন, 'মুক্তিযুদ্ধ কেবল সামরিক যুদ্ধ ছিল না; রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রাজনীতিবিদদের স্বীকৃতি বাতিল করা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।'
সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা ইতিহাস বিকৃতির শামিল।'
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হারুন হাবীব একে 'মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক সিদ্ধান্ত' বলে অভিহিত করেছেন।
বিএনপির নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার।'
📣 মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞায় পরিবর্তন
প্রস্তাবিত আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 'যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং সরাসরি অংশ নিয়েছেন, তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা।'
এতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক ও নার্সদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে।
📣 নতুন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন সংজ্ঞা কার্যকর হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে অনেকের স্বীকৃতি বাতিল হতে পারে।
বর্তমান আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, '২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণায় যারা অংশ নিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা।' কিন্তু নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, 'পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।'
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
এই খসড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর এটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এই নতুন খসড়া আইনের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও মর্যাদায় ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সুত্র : সমকাল
আরো পড়ুন |
---|
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ ও প্রতিকার |
মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা |
ঘুমের গুরুত্ব এবং প্রতিদিন কত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত? |