প্রবাসীদের প্রক্সি ভোট নেয়ার চিন্তা ভাবনা করছে নির্বাচন কমিশনার।


 প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোট: প্রক্রিয়া, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ


Proxy voting for expatriates
প্রবাসীদের প্রক্সি ভোট প্রক্রিয়া


বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ১ কোটি ৩৬ লাখের মতো বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। প্রবাসী ভোটারদের জন্য এই অযোগ্যতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন প্রশ্ন এবং দাবি উঠছে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রক্সি ভোট পদ্ধতি চালু করার চিন্তা-ভাবনা করছে।

প্রক্সি ভোট একধরনের ভোট প্রদান প্রক্রিয়া, যেখানে ভোটার নিজে উপস্থিত না হয়ে, নির্ধারিত একজন প্রতিনিধি বা প্রক্সি ভোটার তাকে প্রতিনিধিত্ব করে ভোট প্রদান করেন। বাংলাদেশে এটি একটি নতুন ধারণা এবং প্রবাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হতে পারে, যা তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারে। তবে, এই পদ্ধতির সঙ্গে একাধিক প্রশ্ন এবং সংশয়ও রয়েছে, বিশেষ করে যারা প্রক্সি ভোটার হতে পারবেন এবং এর কার্যক্রম কেমন হবে, তা নিয়ে।


✅ প্রক্সি ভোট: কী, কেন এবং কিভাবে?

প্রক্সি ভোট পদ্ধতি মূলত একটি 'পাওয়ার অব অ্যাটর্নি'র মতো। এর মানে হল, ভোটার তার ভোট প্রদান করার অধিকার অন্যকে প্রদান করেন, যাতে সেই ব্যক্তি তার পক্ষ থেকে ভোট প্রদান করতে পারেন। এই পদ্ধতি প্রবাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হতে পারে, কারণ তারা বাংলাদেশে উপস্থিত না থাকলেও তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবাসী ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না, কারণ তারা নির্বাচনের দিন বাংলাদেশে থাকতে পারেন না। কিন্তু প্রক্সি ভোট পদ্ধতি চালু হলে, তারা দেশের নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন, এমনকি তারা বিদেশে বসেও।


✅ প্রক্সি ভোটার হিসেবে কারা যোগ্য?

ইসি জানিয়েছে যে, প্রক্সি ভোটারের জন্য কিছু শর্ত রাখা হয়েছে, যাতে প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। প্রক্সি ভোটার হতে পারবেন শুধুমাত্র প্রবাসীদের নিকট আত্মীয় ও রক্ত সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিরা।


এদের মধ্যে যারা প্রক্সি ভোটার হতে পারবেন, তারা হলেন:

✔ বাবা

✔ মা

✔ ভাই

✔ বোন

✔ স্ত্রী

✔ পুত্র

✔ পুত্রবধূ

✔ কন্যা


অর্থাৎ, প্রবাসীরা যাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, কেবল তারা প্রক্সি ভোটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এই নিয়মটি নিশ্চিত করবে যে, ভোট দেওয়ার সময় প্রক্সি ভোটারের নির্বাচনী এলাকার কোনো অসঙ্গতি সৃষ্টি না হয় এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া যথাযথভাবে চলতে পারে।


✅ প্রক্সি ভোটের পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া

প্রক্সি ভোট পদ্ধতি চালু করার জন্য নির্বাচন কমিশন একটি অ্যাপ ডেভেলপ করার পরিকল্পনা করছে। যদিও এখনও এই অ্যাপের কাজ শুরু হয়নি, তবে ভবিষ্যতে এটি প্রবাসী ভোটারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। প্রবাসীরা এই অ্যাপের মাধ্যমে নিজে থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং নিজের পক্ষে একজন প্রক্সি ভোটার নির্ধারণ করতে পারবেন।

এই প্রক্রিয়ায়, প্রবাসী ভোটারকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন করতে হবে এবং তার নির্বাচনী এলাকার প্রক্সি ভোটারকে নির্বাচন করতে হবে। প্রক্সি ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত ব্যক্তি তার এনআইডি ও ফোন নম্বর সরবরাহ করবেন। এভাবে প্রবাসীরা বিদেশে বসেও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন, এবং তারা সেই ব্যক্তিকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করবেন, যিনি তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।

✅ প্রক্সি ভোটের সুবিধা এবং গুরুত্ব

প্রক্সি ভোট পদ্ধতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা নিয়ে আসবে। প্রথমত, এটি তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে, যা দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই প্রক্রিয়ায় ভোট দিতে সক্ষম হলে, দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং উন্নয়নের জন্য তাদের মতামত দিতে পারবেন।

এছাড়া, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হলে, নির্বাচন কমিশন আরও বড় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারবে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা এবং গণতন্ত্রের শক্তি বাড়াবে।


✅ প্রক্সি ভোটের চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা

প্রক্সি ভোটের সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা জড়িত থাকতে পারে। প্রথমত, এটি নিশ্চিত করা যে প্রক্সি ভোটাররা সঠিকভাবে এবং সৎভাবে ভোট প্রদান করছেন, একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। প্রক্সি ভোট পদ্ধতি যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বা অনিয়ম সৃষ্টি করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, যেহেতু প্রক্সি ভোটারদের কাছ থেকে এনআইডি এবং ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হবে, সেই তথ্যের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। যদি এই তথ্যগুলো লিক হয়ে যায় বা অপব্যবহার হয়, তবে এটি প্রবাসী ভোটারদের জন্য একটি বড় ঝুঁকি হতে পারে।

তৃতীয়ত, প্রক্সি ভোট পদ্ধতি চালু হলে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে ইসি’র জন্য অতিরিক্ত লোকবল এবং প্রযুক্তি প্রয়োজন হবে। নতুন এই প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে গেলে উপযুক্ত প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষিত কর্মী প্রয়োজন হবে।


✅ উপসংহার

প্রক্সি ভোট পদ্ধতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এটি তাদের দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করবে এবং গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে, এর সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করতে পারে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যদি নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তবে তা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে, যা দেশের উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক মানসিকতা গড়তে সহায়ক হবে।



আরো পড়ুন
রমজানে কী খাবার খাওয়া উচিত? – স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা
গরমের দিনে যেসব ফল থাকা চাই আপনার খাদ্যতালিকায়
প্রতিদিন একটি লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে যেসব উপকার পাবেন

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.